জ্ঞান কোন বস্তু নয় যে চাইলেই এটা অন্যের নিকট হস্তান্তর করা যাবে। যদিও আমরা বলে থাকি, শিক্ষক শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান দান করেন, আসলে কথাটি সঠিক নয়। একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ হচ্ছে শিক্ষার্থীর ভিতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলোকে জাগ্রত করার চেষ্টা করা। যদি শিক্ষক জ্ঞানই দান করবেন তাহলে তো সকল শিক্ষার্থীর জ্ঞান সমান হওয়ার কথা, কেননা, শিক্ষক নিশ্চয় কাউকে কম আর কাউকে বেশী জ্ঞান দান করেন না।

একজন আদর্শ শিক্ষক সর্বদাই আপন দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের দ্বারা শিক্ষার্থীদের অন্তরের এমন জায়গায় কশাঘাত করেন যেখানে তাদের প্রতিভাগুলো লুকিয়ে থাকে। শিক্ষকের এই কশাঘাত এর কারণে যেসকল শিক্ষার্থীর মাঝে জানার ক্ষুধা তৈরী হয়, পরবর্তীতে তারাই জ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। জগৎবিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস এর মতে, “I cannot teach anybody anything. I can only make them think.”  অর্থাৎ, “আমি কাউকে কিছু শেখাতে পারি না। আমি কেবল তাদের ভাবাতে পারি”।

বর্তমান সময়ে যদিও বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এ+ এর ছড়াছড়ি তবুও বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে জ্ঞানীদের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। সম্ভবত পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যে দেশের ছেলেমেয়েরা একটা ‘প্রথম শ্রেণীর চাকুরী’ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও নিজের উপর আস্থা না থাকায় কোচিং এ ভর্তি হন। সারাজীবন প্রাইভেট কোচিং এর নির্ভর করে লেখাপড়া শেষে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের বেলায়ও এর মায়া ত্যাগ করতে পরেন না, প্রকৃতপক্ষে এরা কতটা শিক্ষিত বা জ্ঞানী সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর প্রমাণ দেয়ার কথা বললে একটা উদাহরণই যথেষ্ট আর তা হলো, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজীও অধ্যায়ন এবং স্নাতকোত্তর পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীকেই ইংরেজী পড়তে হয় মেজর কিংবা নন মেজর বিষয় হিসেবে। অথচ লেখাপড়া শেষ করে এসে ইংরেজীতে কথাবলা তো দূরের কথা, গুছিয়ে কিছু লিখতে বললেও তাদের প্যালপিটেশন(Palpitation) শুরু হয়। এর অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে তারা সারাজীবন লেখাপড়া করে কেবল একটা  একটা এ+ এর আশায়, জ্ঞান আহরণের জন্য নয়।

যতদিন পর্যন্ত না শিক্ষার্থীরা এ+ এর পিছনে ছুটা বন্ধ করে জ্ঞানের পিছনে ছুটবে ততদিন পর্যন্ত এদেশে জ্ঞানীর সংখ্যা হ্রাস পেতেই থাকবে। আর শিক্ষকরাও তাদের হারানো সম্মান ফিরে পাবেন না। শিক্ষকতাকে কেবলমাত্র পেশা হিসেবে বিবেচনা না করে বরং দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। তাহলেই একজন শিক্ষকের পক্ষে শিক্ষার্থীর ভিতরে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাগুলো জাগ্রত করা সম্ভব। প্রযুক্তির কল্যাণে আপন জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো এখন সকলের জন্য সাধারণ বিষয়, অভাব কেবল আমাদের ইচ্ছাশক্তির।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *