ভবিষ্যৎ সুখের জন্য যারা বর্তমানে পরিশ্রম করেন তারা ‍হয় অজ্ঞ নাহয় অমানুষ

সকল প্রাণির জন্য চরম সত্য হচ্ছে তার মৃত্যু। আর এটি এমনি সত্য যে কোন প্রাণিই জানেনা কখন তার মৃত্যু হবে। মানুষও তা থেকে ব্যতিক্রম নয়। আগামী এক ঘন্টার মধ্যে তার জীবনে ঠিক কী কী ঘটনা ঘটতে চলেছে এটা কোন মানুষই নিশ্চিত করে বলতে পারেন না। একজন মানুষের জন্য কেবল এটাই সত্য যে, যদি বেঁচে থাকি তাহলে আমি এই সময়ের মধ্যে এই এই কাজগুলো করতে চাই কেবল এতটুকু বলার সক্ষমতা আছে। তাহলে যেখানে এক ঘন্টার মধ্যে সম্ভাব্য ঘটনাগুলো কেবল ধারণা করা ছাড়া নিশ্চিত বলার সুযোগ নেই সেখানে আমি বর্তমানে পরিশ্রম করছি ভবিষ্যতে সুখে থাকবো বলে এটা কী করে বলা সম্ভব?

জীবন মানেই গতি, আর গতি প্রকাশিত হয় কাজ দ্বারা। আমি কাজ করছি বলেই তো আমি জীবিত, তা না হলে অন্যান্য জড় পদার্থের মত আমিও পড়ে থাকতাম কোথাও না কোথাও। প্রকৃতপক্ষে কোন মানুষই ভবিষ্যতের জন্য পরিশ্রম করেন না বরং পরিশ্রম করাটা তার অপরিহার্য্য কাজ। আর তাছাড়া পরিশ্রম করা ছাড়া তার অন্যকোন উপায়ও নেই, তাই তিনি পরিশ্রম করেন। একজন শিক্ষার্থীর কথাই ধরা যাক না কেন, শিক্ষার্থীর কাজ লেখাপড়া করা। লেখাপড়া করছেন বলেই তিনি একজন শিক্ষার্থী। এখন কোন শিক্ষার্থী যদি বলে, আমি বেশি বেশি লেখাপড়া করছি একটা ভালো ফলাফলের জন্য কেননা ভালো ফলাফল করলে ভালো চাকুরি পাবো আর ভালো চাকুরি পেলে ভবিষ্যতে সুখে থাকবো। এটি একটি কথার কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রথমতঃ লেখাপড়া শেষ করা পর্যন্ত ঐ শিক্ষার্থী বাঁচবেন কি না, ঐ শিক্ষার্থী সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন। দ্বিতীয়তঃ ভালো ফলাফল করেও ভালো চাকুরি পাননি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। তৃতীয়তঃ শিক্ষা গ্রহণ করাই শিক্ষার্থীর ধর্ম এবং কর্ম। একজন শিক্ষার্থী যত বেশি পড়বে তত বেশি শিখবে; কাজেই এর সাথে অন্য কিছুর অবতারণা করার কোন আবশ্যকতা নেই।

ছাত্র-শিক্ষক, কামার-কুমার, কৃষক-মজুর যার কথাই বলি না কেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় নিজেদের কাজ করেন কারণ ঐ কাজ করাই তার কর্তব্য এবং উক্ত কাজ করতে তিনি বাধ্য। আর তাছাড়া উক্ত কাজ করার কোন বিকল্প তার কাছে নেই। যিনি যে কাজই করুন না কেন উক্ত কাজ করার বিনিময়ে তিনি ভবিষ্যতে সুখী হবেন এমন নিশ্চয়তা কেউই দেয়ার সক্ষমতা রাখেন না। অবশ্য “ইহকালে ভালো কাজ করছি পরকালে ভালো থাকবো বলে” একথা বলা হলে সেটি আলাদা ব্যাপার। কেননা, প্রত্যেক জীবের জন্য তথা মানুষের জন্য মৃত্যু অবধারিত বিষয়। মানুষের জীবদ্দশা হচ্ছে তার ইহকাল আর মৃত্যুর পরের সময়টা তার জন্য পরকাল যা শাশ্বত এবং চিরন্তন। সুতরাং যারা তার কাজকে বর্তমানের কর্তব্য মনে করেন না বরং ভবিষ্যতে সুখের জন্য কাজ করেন এমন কথা বলেন তারা হয় অজ্ঞ নাহয় অমানুষ।