খেলা মানেই একটা হারজিত এর প্রতিযোগিতা যেখানে কোন পক্ষই নিশ্চিত জানেন না তিনি/তারা শেষ পর্যন্ত জিতবেন নাকি হারবেন। তথাপিও নিজের শক্তি সামর্থের উপর ভর করে প্রত্যেক পক্ষই ভাবেন তিনি/তারাই শেষ পর্যন্ত জিতবেন। কিন্তু সাপ-লুডু খেলাটা সম্পূর্ণ আলাদা। একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যে সবাই ছুটে চলেছে, কে আগে পৌঁছে(জেতে) সেটাই দেখার বিষয়। আগে পিছে যে যেখানেই থাকুকনা কেন, কেউই জানেনা প্রকৃতপক্ষে কে আগে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছবেন। কেননা, আগে থাকলেও যেকোন মূহুর্তে সাপের মুখে পড়লেই ঘটবে পতন। আর পুরো ম্যাচ চলাকালীন ঘটে এই উত্থান আর পতনের পালাবদল। যারা শেষ অবদি উত্থান আর পতনের পালাবদলের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছতে পারলো তারা সবাই জিতে গেলো, কেউ একটু আগে আর কেউবা একটু পরে।

বস্তুতঃ মানুষের দুনিয়ার জীবনকালটা হচ্ছে উত্থান আর পতনের খেলা ঠিক সাপ-লুডুর মত। এখানে সবাই ছুটছে তো ছুটছেই। সকলেই জানে তার শেষ গন্তব্য হচ্ছে মৃত্যু কিন্তু কেউই জানে না কখন কার মৃত্যু ঘটবে। তাই কেউই মৃত্যু নিয়ে ভাবারও খুব একটা কোন প্রয়োজন অনুভব করে না। সবার যেন একটাই ভাবনা, কে, কার থেকে, কতটা ওপরে থাকবে। চলছে তার জন্য অবিরত প্রচেষ্টা। কেউবা হঠাৎ করেই মই বেয়ে অনেক ওপরে ওঠে যায়, আর কেউবা হঠাৎ সাপের মুখে পড়ার মত জীবনের গতি হারিয়ে ফেলে। তারপর আবারও শুরু হয় ওপরে ওঠার অদম্য প্রচেষ্টা, এভাইবেই চলে শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই যারা হাল ছেড়ে দেয় বস্তুতঃ তারা বেঁচে থেকেও মৃত। আর যারা শেষ নিঃশ্বাস থাকা পর্যন্ত ওপরে ওঠার যুদ্ধ চালিয়ে যান তারা মরে গিয়েও জীবিত। কেননা, মৃত মানে সব কিছূ শেষ হয়ে যাওয়া নয় বরং মৃত মানে স্থানান্তর। প্রত্যেক মানুষকেই দুনিয়ার এই ময়দান ছেড়ে অন্য এক ময়দানে উপস্থিত হতে হবে এটাই সত্য এখন কে, কিভাবে এ ময়দান ত্যাগ করছে প্রকৃতপক্ষে সেটাই হচ্ছে আসল কথা।

পবিত্র কুরআনের ভাষায়, “পার্থিব জীবন ক্রীড়া ও কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়(সূরা আনয়াম/৩২”। আলবার্ট আইনস্টাইন এর মতে, “জীবন হলো সাইকেলের মত। ভারসাম্য ঠিক রাখতে অবশ্যই এটা চালিয়ে যেতে হবে”। আর ম্যাক্সিম লাগস বলেছিলেন, “জীবন একটা পর্বত। লক্ষ্য হলো সঠিক পথ অনুসন্ধান করা, শীর্ষে পৌঁছানো নয়”।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *