ভবিষ্যৎ এর চিন্তা মানুষকে সর্বদাই উদ্বিগ্ন করে তোলে, এটা কি সত্যি? হ্যাঁ সত্যি, তবে তা নিকটতম ভবিষ্যৎ এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একজন মানুষ খুব বেশী হলে ৮০/৯০/১০০ বছর বাঁচেন। অধিকাংশ মানুষই এই ১০০ বছরের মধ্যে অর্থাৎ তার জীবদ্দশায় নিজের ক্ষেত্রে যেসকল ঘটনা এখনো পর্যন্ত ঘটেনি বা ঘটতে পারে, সেটাকেই ভবিষ্যৎ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। একশত অথবা এক হাজার অথবা এক লক্ষ কিংবা এক কোটি বছর বা তার থেকেও অধিক সময় পরে অর্থাৎ তার মৃত্যুর সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে তার ক্ষেত্রে কিরূপ ঘটনা ঘটবে বা ঘটতে পারে, কেবলমাত্র জ্ঞানীরা ছাড়া এটা নিয়ে আর কেউই খুব একটা বেশী ভাবেন না।

আজ ও আগামীকালের মধ্যে তফাৎ শুধু এটুকুই, সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয়। আর কোন মানুষই এটা নিশ্চিত করে বলতে পারেন না, তার জীবনে আগামীকালের সূর্যোদয় আদৌ ঘটবে কি না। অথচ এই আগামীকাল কে কেন্দ্র করেই আমাদের যত দুঃশ্চিন্তা। যদি কোন মানুষের জীবনে আগামীকালের সূর্যোদয় ঘটে তখন সেটা তার জন্য হয়ে যায় ‘আজ’। আর আজকের দিনটাকে কেন্দ্র করে মানুষ খুব বেশী উদ্বিগ্ন হয় বলে আমার মনে হয় না। সূর্যাস্তের পর আগামীকালের সুর্যোদয় আমার জীবনে ঘটবে কি না সেটা অনিশ্চিত; আবার যদি সূর্যোদয় ঘটে তখন সেটা আমার নিকট ‘আজ’। তাহলে কোন অনিশ্চিত বিষয় নিয়ে কিংবা আজকের বিষয় নিয়ে অযথা দুঃশ্চিন্তার কোন যৌক্তিকতা আছে কি?

বিখ্যাত মনিষী ডেলকার্নেগী বলেছিলেন, “Remember, today is the tomorrow you worried about yesterday” “অর্থাৎ মনে রাখবেন, আজ সেই আগামীকাল যার জন্য আপনি গতকাল চিন্তিত ছিলেন”। চোখ বন্ধ করলেই কোন মানুষের কাছে আর আগামীকাল বলে কিছু থাকে না। জেগে উঠলে তখন ওটা তার কাছে হয় আজ, আর জেগে না উঠলে ওটা নিয়ে তখন তার ভাবার কোন সুযোগই নেই। সুতরাং আজকের জন্য চিন্তা করা কিংবা কোন অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের জন্য চিন্তা করা নিতান্তই বোকামী।

বস্তুতঃ আমার ভবিষ্যৎ তো সেটাই, যেটা আমার ক্ষেত্রে একশত/ এক হাজার/ এক লক্ষ/ এক কোটি বছর পরে, তথা আমার মৃত্যুর সময় থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে আমার ক্ষেত্রে ঘটবে বা ঘটতে পারে। যার সৃষ্টি আছে তার ধ্বংস অনিবার্য। আর যা একবার শূন্য থেকে সৃষ্টি করা হয়, তা আবারও সৃষ্টি করা হতেই পারে। তাহলে আজ আমি আছি, নিশ্চিত আগামীকাল থাকবো না। আর যিনি আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তিনি আমাকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন কিংবা করতে পারেন এটাও সুনিশ্চিত। আর এই সুনিশ্চিত বিষয়টি জেনেও যারা তার জন্য উদ্বিগ্ন হয় না, প্রকৃতপক্ষে তারাই হচ্ছে প্রথম সারির মূর্খ্য বা গবেট। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, “তখন কি অবস্থা দাঁড়াবে? যখন আমি তাদেরকে একদিন সমবেত করবো, যে দিনের আগমনে কোন সন্দেহ নেই। আর নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিদান প্রত্যেকেই পাবে এবং তাদের প্রাপ্য প্রদানে মোটেই অন্যায় করা হবে না(সুরা আল ইমরান/২৫)”।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *