শিরোনামে বর্ণিত উক্তিটি করেছিলেন স্বনাম ধন্য বিজ্ঞানী এ.পি.জে আব্দুল কালাম। মানব জীবনযাত্রার এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগেনি কিংবা না লাগলেও অনতিবিলম্বে সেখানে বিজ্ঞান পৌঁছে যাবে এটা অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। অর্থাৎ বিজ্ঞান এখন মানব জীবনযাত্রার একটি অবিচ্ছেদ্য বিষয়। তার পরেও বিজ্ঞানকে কেন্দ্র করে মানুষের মাঝে রয়েছে নানা ধর্মীয় গোড়ামী কিংবা অহেতুক বাড়াবাড়ি; যেমন- বাংলাদেশের মারকাজ মসজিদগুলোতে আযান দেয়ার সময় মাইক ব্যবহার করা হয় না, এটি একটি ধর্মীয় গোড়ামীর দৃষ্টান্ত। আমি জানিনা ঠিক কী কারণে তারা মাইকে আযান দেন না, তবে এটাতো ঠিক যে, মাইকে আযান দিলে সে আযান অধিক মুসল্লিদের কাছে পৌঁছাবে আর আযানের মূল উদ্দেশ্যও হচ্ছে মুসল্লিদেরকে নামাজের বিষয়ে আহ্বান করা।

বিজ্ঞানের আবিষ্কার মানুষের মাঝে কল্যাণ ছাড়া আর কিছু এনেছে বলে আমার মনে হয় না। বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেল এ্যাটম বোমা আবিষ্কার করেছিলেন, অবশ্যই মানুষ মারার জন্য নয়। এখন কেউ যদি এটা বলেন যে, যেহেতু বোমা দ্বারা মানুষ মারা যায় কাজেই বোমা বানানো উচিৎ নয় তাহলে সেটা তার ব্যক্তিগত মতামত। পৃথিবীতে মহান সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টির মাঝেই একটা দ্বৈত্য স্বত্বা বিদ্যমান; যেমন- আসমান-জমিন, রাত-দিন, আলো-আঁধার, ভালো-মন্দ, পাপ-পূণ্য, নারী-পুরুষ, এমনকি কোন প্রাণীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে তাকালেও দেখবো, বুক-পীঠ, হাতের এপিঠ-ওপিঠ ইত্যাদি। অর্থাৎ সৃষ্টিজগতে এমন কোন বিষয় নেই যার কোন জোড়া নেই কেবলমাত্র সৃষ্টিকর্তা ব্যতিত। সুতরাং মানুষ যা কিছু আবিষ্কার করেছে বা করছে সেগুলোরও দুটো পিঠ বিদ্যমান অর্থাৎ একটি হচ্ছে এর ভালো দিক আর অন্যটি মন্দ দিক, এটাই স্বাভাবিক। আর মানুষের জন্য উত্তম হচ্ছে বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলোর ভালো দিকটি গ্রহণ করা, খারাপ দিক আছে বলেই তা উপেক্ষা করা নয়। টেলিভিশনে নষ্টামো দেখানো হয় বলে খবর বা শিক্ষামূলক কোন বিয়ষ দেখার জন্যও টেলিভিশন দেখবো না, এটি ধর্মীয় গোড়ামী ছাড়া কী হতে পারে?

আজকাল অনেক বাবা-মা সন্তানের দাবীর মুখে তাদের হাতে এন্ড্রয়েড ফোন তুলে দেন। অথচ ঐ বাবা-মাকে যদি বলা হয়, বাসায় একটা কম্পিউটার কিনে দেন সন্তানের জন্য তাহলে তারা বলবেন, না, সন্তানের লেখাপড়া নষ্ট হবে। অথচ সন্তানের লেখাপড়া নষ্টের জন্য ঐ এন্ড্রয়েড ফোনটাই যথেষ্ট। বস্তুতঃ একজন সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য এন্ড্রয়েড ফোন নয় বরং ইন্টারনেট সংযোগ সহ একটা কম্পিউটার জরুরী। একজন শিক্ষার্থীর মেধাবিকাশে ১০ জন গৃহ শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে যে অবদান রাখতে পারেন, তার থেকে অন্ততঃ একশত গুণ বেশী ভূমিকা রাখতে সক্ষম ইন্টারনেট সংযোগসহ একটা কম্পিউটার। তার পরেও অনেক বাবা-মা নিজের অজ্ঞতার কারণে সন্তানকে কম্পিউটার এর পরিবর্তে কিনে দেন এন্ড্রয়েড ফোন যার ভালোর তুলনায় খারাপ এর ভূমিকাটাই সব থেকে বেশি।

বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কার এর মাঝে ভালো-মন্দ দুটি বিষয়ই বিদ্যমান। বিজ্ঞানের বিরোধীতা করতে গিয়ে এটার সুফল থেকে বিরত থাকা যেমন নির্বুদ্ধিতা; ঠিক তেমনি বিজ্ঞানের পূঁজা করতে গিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করাটাও চরম নির্বুদ্ধিতা। বিজ্ঞানীরা অনেক কিছুই আবিষ্কার করেছেন বা করছেন, কিন্তু তা আবিষ্কার করার জন্য তার মাঝে যে জ্ঞান রয়েছে সেটা কিন্তু তিনি তৈরীও করেননি বা আবিষ্কারও করেননি। এটা তাকে কেউ একজন দিয়েছেন, তিনি স্বীকার করুন আর না করুন, তিনিই মহান আল্লাহ তথা মহান সৃষ্টিকর্তা। বিজ্ঞানীদের উচিৎ তাদের আবিষ্কার করতে পারার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা; আর যারা সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করেন তাদের উচিৎ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত বিষয়গুলোর ভালো দিকটি সাদরে গ্রহণ করা; আর এর মাঝেই রয়েছে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের চরম স্বার্থকতা।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *