‘পৃথিবীতে মানুষ নিজের ইচ্ছায় ও চেষ্টায় আসে’ একথা অতীতে কোন মানুষ কখনো বলেনি, বর্তমানেও কেউ বলছে না এবং ভবিষ্যতে কেউ বলবে এমন কোন সম্ভাবনাও নেই। প্রত্যেক প্রাণীর সৃষ্টি পানি থেকে, মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। এ বিষযে পবিত্র কুরআনের বাণী, “আল্লাহ প্রত্যেক চলন্ত জীবকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। তাদের কতক বুকে ভয় দিয়ে চলে, কতক দুই পায়ে ভর দিয়ে চলে এবং কতক চার পায়ে ভর দিয়ে চলে; আল্লাহ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম (সুরা নুর/৪৫)। অতএব, মানুষের দেখা উচিত কি বস্তু থেকে সে সৃজিত হয়েছে। সে সৃজিত হয়েছে সবেগে স্খলিত পানি থেকে। এটা নির্গত হয় মেরুদন্ড ও বক্ষপাজরের মধ্য থেকে (সুরা তারিক/৫-৭)। কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? (সুরা আম্বিয়া/৩০)”।

পানি থেকেই সকল জীবের উদ্ভব এটা বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত। সুতরাং কোন পানি নিজের ইচ্ছা ও চেষ্টা দ্বারা মানুষ রূপে পৃথিবীতে আগম করেছে, এমনটি ভাবা একটি উদ্ভট এবং অবান্তর বিষয়। মানুষ যদি নিজের চেষ্টায় পৃথিবীতে না এসে থাকে, তাহলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে মানুষকে কেউ একজন সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর এটা স্বীকার করে নিলে প্রত্যেক মানুষের জীবদ্দশায় চারটি এবং কেবলমাত্র চারটি কাজ করা আবশ্যক হয়ে যায়। (১) আমাকে কেউ একজন সৃষ্টি করেছেন, একসময় আমি থাকবো না এবং যিনি আমাকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন তিনি চাইলে দ্বিতীয়বারও আমাকে সৃষ্টি করতে পারেন এটা সত্য বলে স্বীকার করা। (২) জীবিকার তাগিদে প্রয়োজনীয় সকল কার্যাদি যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তার নির্দেশনা অনুযায়ী করা। (৩) নিজে ভালো থাকার সাথে সাথে অন্যদের ভালো-মন্দও নিজের সাথে অন্তর্ভূক্ত করা। (৪) শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকার জন্য সৃষ্টিকর্তা আমার জন্য যেসকল রুটিন ওয়ার্ক নির্ধারণ করে দিয়েছেন সেগুলো যথাযথ ভাবে সম্পাদন করা।

পবিত্র কুরআনে বর্ণিত বিষয়গুলো বিজ্ঞান কেবল প্রমান করে দেখেছে মাত্র। আর পৃথিবীর মানুষের কাছে অনেকগুলো ঐশি গ্রন্থের মাঝে সবার পরে কুরআনের আগমন ঘটেছে তারপর বিজ্ঞানের। সুতরাং মানুষ কুরআনের অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করলে তা যেমন সকল ঐশি গ্রন্থের প্রতিনিধিত্ব করে, আর বিজ্ঞানের রসদ তো কুরআনেই আছে তাই এটা বিজ্ঞানেরও বাইরে নয়। পক্ষান্তরে কুরআনকে উপেক্ষা করে কেউ যদি নিজেকে বিজ্ঞানের পূজারী বলে দাবী করেন সেটা স্থূল বুদ্ধির পরিচয় বহন করে। যেহেতু কোন মানুষের পৃথিবীতে আগমনের ক্ষেত্রে তার নিজের কোন ভূমিকা নেই, কাজেই সৃষ্টিকর্তার নির্দেশনার আলোকে নিজেকে পরিচালনা করা প্রত্যেক মানুষের জন্য আবশ্যকীয় কাজ আর তাহলেই স্বার্থক হবে স্রষ্টার সৃষ্টির উদ্দেশ্য।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *