বাংলায় ঈমান এর প্রতিশব্দ হিসেবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা বা স্বীকৃতি দেয়া বুঝানো হয়ে থাকে। আর যে ব্যক্তির মাঝে ঈমান আছে তিনি হচ্ছেন ঈমানদার। ঈমানের অনেকগুলো শাখা-প্রশাখার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম হলো, আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোনও উপাস্য নেই, এ কথা বলে স্বীকৃতি দেয়া। এর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা হতে কষ্টদায়ক জিনিস দূরে সরিয়ে দেয়া। সুতরাং যেকোন মানুষের পক্ষে একজন ঈমানদার হওয়া মোটেও কোন কঠিন বিষয় নয়।
ঈমান সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৭৭ নম্বর আয়াকে বলেছেন, “সৎকর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিমদিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎকাজ হল এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, ফেরেশতাদের উপর এবং সমস্ত নবী-রসূলগণের উপর, আর সম্পদ ব্যয় করবে তাঁরই মহব্বতে আত্নীয়-স্বজন, এতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্যে। আর যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দান করে এবং যারা কৃত প্রতিজ্ঞা সম্পাদনকারী এবং অভাবে, রোগে-শোকে ও যুদ্ধের সময় ধৈর্য্য ধারণকারী তারাই হল সত্যাশ্রয়ী, আর তারাই পরহেযগার”।
মুমিন মাত্রই তিনি একজন ঈমানদার কিন্তু ঈমানদার মানেই তিনি মুমিন নাও হতে পারেন। পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত আয়াতের প্রথম অংশে মহান আল্লাহ তা’আলা কয়েকটি বিষয়ের প্রতি ঈমান আনতে বলেছেন অর্থাৎ উক্ত বিষয়গুলোকে সত্য বলে গ্রহণ করতে বা স্বীকৃতি দিতে বলেছেন। আর উক্ত আয়াতের শেষাংশে কয়েকটি কাজ করতে বলেছেন। এখন যদি কোন মানুষ উক্ত আয়াতের প্রথমাংশের বিষয়গুলোর প্রতি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেন তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি একজন ঈমানদার। কিন্তু মুমিন হতে হলে তাকে উক্ত বিশ্বাসের আলোকে আয়াতের শেষাংশে বর্ণিত কাজগুলো অবশ্য অবশ্যই করতে হবে। যদি তা না করেন, তাহলে তিনি একজন ঈমানদার হলেও মুমিন নন।
প্রত্যেক মুমিন তার আমলের প্রতিদান পরকালে তো পাবেনই, উপরন্তু দুনিয়ার জীবনের জন্যও মাহন আল্লাহ তা’আলা তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৬ নম্বর আয়াতে মুমিনদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলেছেন, “আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে বস্তুতঃ আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নেই, যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা এবং আমার প্রতি নিঃসংশয়ে বিশ্বাস করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে”। একই সুরার ১৫২ ও ১৫৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো এবং আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন”।
সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, কোন মানুষের পক্ষে ঈমান আনয়ন করা যথেষ্ট সহজ। কিন্তু মুমিন হতে হলে ঈমান আনার সাথে সাথে তাকে বিনয়ের সাথে আমলও করতে হবে, যা খুব একটা সহজ নয়। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, “ধৈর্য্যর সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাজের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব(সুরা বাকারা/৪৫)”।