শিরোনামে বর্ণিত উক্তিটি করেছিলেন ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি এবং অধ্যাপক, লেখক ও বিমান প্রযুক্তিবিদ এ.পি.জে. আবদুল কালাম। তিনি বলেছিলেন, “Creativity is seeing the same thing but thinking differently.” অর্থাৎ “সৃজনশীলতা হচ্ছে একই জিনিস দেখা কিন্তু ভিন্নভাবে চিন্তা করা”। বিগত ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই প্রায় ৮৩ বছর বয়সে জনাব এ.পি.জে. আবদুল কালাম পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেও মানব চরিত্র গঠন ও মনুষত্য বিকাশে তার অবিস্মরণীয় উক্তিগুলি চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং চিরকালই থাকবে। যেখানে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদেরকে পরনির্ভরশীল হতে অধিকতর উৎসাহিত করে সেখানে তিনি বলতেন, “The best brains of the nation may be found on the last benches of the classroom. অর্থাৎ শ্রেণীকক্ষের শেষ বেঞ্চে জাতির শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্ক পাওয়া যেতে পারে”। তাই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলতেন, “Never compare yourself to others. Your path is different from others. Focus on your own journey”.
ঠিক তাই, কোন মানুষেরই উচিৎ নয় অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করা। প্রত্যেকের পথ আলাদা। নিজেকে নিজের মত করেই প্রকাশ করা উচিৎ। প্রত্যেক মানুষের মাঝেই কিছু না কিছু সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। একজন সৃজনশীল মানুষ সর্বদাই নিজের সম্ভাবনাগুলোকে জাগ্রত করার চেষ্টা করবে। জগৎবিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস এর ভাষায়, “Strong minds discuss jdeas. Average minds discuss events. Weak minds discuss people.” অর্থাৎ “শক্তিশালী মন ধারণা নিয়ে আলোচনা করে। মধ্যম মন ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে। দুর্বল মন মানুষ নিয়ে আলোচনা করে।”। সক্রেটিস এর এই উক্তিটি সৃজনশীলতা কী তা বুঝানোর জন্য এক চমৎকার দৃষ্টান্ত।
একটি গোলাকৃতি ও অন্যটি বর্গাকৃতি কিংবা চতুর্ভূজাকৃতি বিশিষ্ট দুটি তক্তা খন্ডকে পাশাপাশি রেখে যদি প্রশ্ন করা হয়, এ দুটি তক্তা খন্ডের মাঝে পার্থক্য কী? অধিকাংশ মানুষই উত্তরে বলবেন, এদের একটি গোল এবং অন্যটি চারকোণা কিংবা এদের একটি গোলাকৃতির এবং অন্যটির বর্গাকৃতির/চতুর্ভূজাকৃতির। এটি হচ্ছে তক্তা খন্ডদ্বয়ের মাঝে বিদ্যমান অতি সাধারণ পার্থক্য যা সকল মানুষের কাছেই পরিলক্ষিত হয়। দুই আকৃতির দু’টি তক্তা খন্ডকে দেখে এদের একটি গোল এবং অন্যটি চারকোণা বলার মাঝে জ্ঞান বিদ্যমান থাকলেও কোন সৃজনশীলতা নেই। বস্তুতঃ এই তক্তা খন্ডদ্বয়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করে প্রকাশ করার নামই হচ্ছে সৃজনশীলতা। যেমন- কেউবা হয়তো বললেন, এদের একটি হচ্ছে গোলাকৃতির যার আছে কেন্দ্র, ব্যাস এবং পরিধি ইত্যাদি। এর ক্ষেত্রেফল বের করার জন্য πr2 সূত্রটি ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য তক্তা খন্ডটি হচ্ছে বর্গাকৃতির/চতুর্ভূজাকৃতির; দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ গুণ করলেই এর ক্ষেত্রফল বের হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। অন্য কেউ একজন এসব বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার পাশাপাশি আরও কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করলো। তার সাথে এটাও যুক্ত করলো যে, এদের একটিকে মাটিতে গড়িয়ে দিয়ে সহজেই গতিশীল করা যায়, কিন্তু অন্যটি তা সম্ভব নয়। এই যে দু’টি তক্তা খন্ড দেখে কেবলমাত্র বাহ্যিক রূপ বর্ণনা করা নয় বরং এর অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে তা বর্ণনা করতে পারা; এটাই হচ্ছে সৃজনশীলতা।
একই জিনিস দেখে যে যত বেশি অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করে তা বর্ণনা করতে সক্ষম সে তত বেশি সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে শিক্ষার্থীর সৃজনশীল ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ঐ শিক্ষা কখনোই প্রকৃত শিক্ষা নয় যে শিক্ষা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল ক্ষমতা বিকাশে সহায়তা করে না। সৃজনশীল শিক্ষা ব্যতিত একটি জাতি কখনোই স্বয়ংসম্পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। কেননা, সৃজনশীলতা ব্যতিত শিক্ষা হচ্ছে পঙ্গু শিক্ষা যা শিক্ষার্থীদেরকে পরনির্ভরশীল হতে অধিকতর উৎসাহিত করে এবং এরূপ শিক্ষা হচ্ছে বেকারত্ব বৃদ্ধি করণের সূতিকাগার।
অনেক সুন্দর কিছু লিখেছেন। সব মানুষ যদি এত গভীরভাবে ভাবত! সুন্দর কথা প্রকাশে ধন্যবাদ।