শিরোনামে বর্ণিত উক্তিটি বাংলার মধ্যযুগের কবি বড়ু চন্ডীদাস কর্তৃক উচ্চারিত মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী। হ্যাঁ অবশ্যই সবার উপরে মানুষ সত্য কারণ মানুষ হচ্ছে সকল সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ জীব। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সুরা ইসরার ৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি”।
মানুষ যে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব এটা মানুষ নিজেও উপলব্ধি করে। কিন্তু মানুষের থেকেও কোন বুদ্ধিমান প্রাণী অন্যকোন গ্রহে কিংবা অন্যকোন মহাবিশ্বে বা মহাবিশ্বের বাহিরে আছে কি না তা মানুষের কাছে অজানা। আর তাই অজানাকে জানার জন্য চলছে মানুষের অদম্য প্রচেষ্টা, বস্তুতঃ এখানেই মানুষের আসল শ্রেষ্ঠত্ব। আর এই শ্রেষ্ঠত্বকে প্রকাশ করতে গিয়ে মানুষ যখন স্রষ্টাকেই অস্বীকার করে বসেন তখনই ঘটে যত সব বিপত্তি। মানুষ কেবল সৃষ্টির বিষয়গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কিছূ একটা আবিষ্কার করতে সক্ষম, সৃষ্টি করতে সক্ষম নন। একজন মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পায় যখন তিনি অজনাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন অর্থাৎ তিনি যা জানেন না সেটাকে জানিনা বলে স্বীকার করেন। আর আমি জানিনা তাই আমি সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করি না, এটা হচ্ছে অজ্ঞতার চুড়ান্ত ধাপ। যখন আমি কিছু জানি না, তখন আমার জন্য (১) জানার চেষ্টা করা নয়তো (২) অন্যের জানাকে সত্য বলে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়ে মাধ্যকর্ষণ শক্তির কারণে। বিজ্ঞানীরা এটা খুঁজে বের করেছে মাত্র, তৈরী করেননি। সুতরাং যিনি এই মাধ্যকর্ষণ নীতি তৈরী করেছেন তিনি শুধুমাত্র বিজ্ঞানী নন বরং মহাবিজ্ঞানী। তাকে আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান কিংবা প্রকৃতি যে নামেই ডাকি না কেন তাতে তার মহিমা একটুও কমেনা বা বাড়েনা। যে কারণে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন, “আমি নাস্তিক নই এবং আমি নিজেকে সর্বেশ্বরবাদে বিশ্বাসীও বলি না। আমরা আসলে ছোট্ট একটা শিশুর জায়গায় আছি যাকে বিশাল একটা লাইব্রেরিতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন ভাষায় রচিত বহু বই সাজিয়ে রাখা আছে। শিশুটি জানে যে এই বইগুলো অবশ্যই কেউ একজন লিখেছে। সে জানেনা যে কিভাবে লেখা হয়েছে। সে বইগুলোতে ব্যবহৃত ভাষাগুলোও জানেনা। শিশুটি অনুমান করছে যে বইগুলোকে সাজিয়ে রাখার ব্যপারে একটা রহস্যময় ব্যাপার আছে কিন্তু জানেনা যে সেটা কি। এটাই হচ্ছে আমার মতে স্রষ্টার প্রতি সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষটির আচরণ। আমরা একটা অসাধারণভাবে সাজানো গুছানো মহাবিশ্ব দেখি যা বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলে, কিন্তু সেসব নিয়মকানুনের খুব নগন্য অংশই আমাদের বোধগম্য। আমাদের সীমিত জ্ঞান এই মহাবিশ্বের পেছনের চালিকাশক্তিকে পুরোপুরি বুঝতে পারেনা।”
Amazing