যখন কোন মানব শিশু পৃথিবীতে আগমন করে তখন সে ধনী/গরীব কিংবা মুসলিম/হিন্দু/খ্রীস্টান/বৌদ্ধ কিংবা অন্যকোন ধর্মের অনুসারী হয়ে আগমন করে না; শুধুই একজন মানব শিশু হিসেবে আগমন করে। একজন ধনী মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছে বলে উক্ত মানব শিশুটি ধনী আর একটি শিশু গরীব মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছে বলে উক্ত মানব শিশুটি গরীব এটি বলার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। কেননা, ধনী মায়ের সন্তানটি জন্মের সময় দামী দামী পোশাক পরিধান করে অনেক টাকা-পয়সা আর অলঙ্কারাদি নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে আর গরীব মায়ের সন্তানের ক্ষেত্রে তার বিপরীত এমন কোন নজির আজ পর্যন্ত পরিলক্ষিত হয়নি। বস্তুতঃ ধনী-গরীব সকল শিশুই একইভাবে দুনিয়াতে আগমন করে এবং একইভাবে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেয়।
মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়েছি বলে আমি একজন মুসলিম এটি বাহ্যিক দৃষ্টিতে বিবেচনা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে মুসলিম বলতে আসলে এটাকে বুঝানো হয় না। অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। একজন শিশু জন্মের সময় মুসলিম/হিন্দু/খ্রীস্টান/বৌদ্ধ কিংবা অন্য যেকোন পরিবারেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তার কর্ম ও আচরণ দ্বারা বিবেচিত হবে তিনি প্রকৃতপক্ষে কোন ধর্মের অনুসারী। সুতরাং আমি বিশেষ কোন পরিবারে জন্মেছি বলে আমি বিশেষভাবে গর্বিত এটা বলার কোন কারণ নেই, কেননা এই বিশেষ পরিবারে জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে আমার কোন নিয়ন্ত্রণ ছিলনা। কোন বিশেষ পরিবারে জন্ম নেয়াটা যদি আমার জন্য সম্মানের বিষয় হয়ে থাকে তাহলে তার জন্য আমি বড়জোর আমার স্রষ্টাকে ধন্যবাদ জানাতে পারি, অংহকার করতে পারি না।
মহান সৃষ্টিকর্তা কোন শিশুকে না ধনী হিসেবে দুনিয়াতে পাঠান, না গরবী হিসেবে। মুচি-মেথর, কামার-কুমার, কৃষক-মজুর কিংবা মুসলিম/হিন্দু/খ্রীস্টান/বৌদ্ধ হিসেবে দুনিয়াতে পাঠান না বরং প্রত্যেক শিশুই দুনিয়াতে আগমণের পর বড় হওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার ও চারপাশের পরিবেশ থেকে নিজের অবস্থান চিহ্নিত করতে শেখে। বেশির ভাগ শিশুই নিজের পরিবার যা শেখায় সেটাকেই সত্য বলে গ্রহণ করে এবং নিজের সাথে অন্যদের বিভেদ তেরী করে ফেলে। খুব কম সংখ্যক শিশু তার নিজের পরিবার ও চারপাশের পরিবেশকে উপেক্ষা করে সত্য অনুসন্ধানের চেষ্টা করে এবং নিজেই নিজের পরিচয় তৈরী করতে সচেষ্ট হয়।
আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান মানুষ তাকে যে নামেই ডাকুন না কেন, সকল মানুষের স্রষ্টা এক ও অদ্বিতীয় এবং সব মানুষের প্রত্যাবর্তন একই স্থানে ঘটবে এটাই চিরন্তন। সুতরাং এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, মানুষে মাঝে বিভেদ মানুষেরই সৃষ্ট, সৃষ্টিকর্তা মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেননি।