সমাজের অধিকাংশ মানুষই কথা বলার ক্ষেত্রে সচেতন নন। অর্থাৎ অধিকাংশ মানুষই কথা বলার সময় এটা মাথায় রাখেন না যে, তার কথার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে কিরূপ পরিস্থিতির অবতারণা হতে পারে। যদি কোন মানুষ কথা বলার সময় এটা মাথায় রাখেন যে তার কথার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে তাহলে তার ঐ কথার কার্যকারিতার সময়কাল পর্যন্ত তিনি তা স্মরণ রাখতে বাধ্য। তা না হলে তার একটি কথার কারণে অন্যকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে। বিষয়টা একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যেতে পারে-

এক কুয়াশার রাতে রাস্তার ধারে খালি গায়ে বরফে আচ্ছাদিত এক ব্যক্তিকে দেখে এক ভদ্রলোক তার কাছে জানতে চাইল, ঘন কুয়াশায় আপনি খালি গায়ে আছেন, আপনার ঠান্ডা লাগছে না? উত্তরে লোকটি বলল, আমার কোন গরম কাপড় নেই তাই অভ্যেস করে নিয়েছি। ভদ্রলোকটি বললেন, আপনি আমার জন্য এখানে একটু অপেক্ষা করুন, আমি আপনার জন্য একটা গরম কাপড় নিয়ে আসছি। এর পরের ঘটনা হচ্ছে লোকটি বাড়ীতে গিয়ে সব ভুলে যায় এবং দীর্ঘ সময় পরে যখন মনে পড়ে তখন সে উক্ত জায়গায় গিয়ে দেখে লোকটি মারা গেছে এবং একটা চিরকুট লিখে গেছেন, আমার যখন কোন জামা ছিল না তখন আমি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলাম। যেইমাত্র আপনি আমাকে গরম কাপড় দেয়ার আশ্বাস দিলেন, আমি আপনার প্রতি নির্ভরশীল হয়ে গেলাম এবং এখন অসহ্য ঠান্ডায় আমি মারা যাচ্ছি।

বস্তুতঃ এখানেই রয়েছে মানুষের কথা বলার ক্ষেত্রে সচেতনতার গুরুত্ব। অধিকাংশ মানুষই কথা বলার ক্ষেত্রে সচেতনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করেন না। বিশেষ করে কারো সাথে টাকা-পয়সা ধার দেয়া নেয়া করলে বুঝা যায়, প্রকৃতপক্ষে মানুষটা কতটা সচেতন মানুষ। তাই তো কোন এক ভুক্তভোগী কিংবা জ্ঞানীও বলা যায়, যিনি বলেছিলেন, “যদি বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চাও তাহলে বন্ধুকে টাকা ধার দাও, নয়তো বন্ধুর নিকট থেকে টাকা ধার নাও”। টাকা লেন-দেন এর মাধ্যমে যে বন্ধুত্ব নষ্ট হয় তাকে আদৌ বন্ধুত্ব বলা যায় কি না, সেটা পর্যালোচনার ব্যাপার। কিন্তু টাকা লেন-দেন এর মাধ্যমে যে একজন মানুষের প্রকৃত রূপটা ফুটে ওঠে এটা সন্দেহাতীতভাবে পরিক্ষিত। বিশেষ করে যিনি কখনো কাউকে টাকা ধার দিয়েছিলেন তিনি নিশ্চিত এটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। আর যাদের এ অভিজ্ঞতা নেই তারা চাইলে প্রমাণ করে দেখতেই পারেন।

যদি প্রথমবার কাউকে টাকা ধার দিয়ে তার সম্পর্কে আপনি নতুন কিছু আবিষ্কার করতে না পারেন তাহলে দ্বিতীয়বার নিশ্চয়ই পাবেন। আর যদি দ্বিতীয়বার নতুন কোন অভিজ্ঞতা লাভ করতে না পারেন তাহলে নিশ্চিত তৃতীয়বারে আপনি তার সম্পর্কে নতুন কিছু আবিষ্কার করে ফেলবেন। যদি তৃতীয়বারেও তার সম্পর্কে আপনার নতুন কোন অভিজ্ঞতা অর্জিত নাহয় তাহলে নিশ্চিত ঐ মানুষটি কোন সাধারণ মানুষ নন, অবশ্য অবশ্যই তিনি একজন সচেতনতাবোধ সম্পন্ন মানুষ কিংবা অতিমানব বা মহামানবও বলা যেতে পারে।

প্রত্যেক মানুষের কথা তার অমূল্য সম্পদ। তাই কথা বলার সময় সচেতনভাবে কথা বলা একান্ত আবশ্যক। বিশেষ করে কাউকে বিপদে সাহায্য করার আশ্বাস দেয়া, টাকা-পয়সা ধার দেয়ার আশ্বাস দেয়া কিংবা কারো ধারের টাকা পরিশোধের আশ্বাস দেয়ার ক্ষেত্রে সচেতন না থাকলে এর কারণে বিপরীত পক্ষের চরম ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। যে ব্যক্তি কোন কথা বলার সময় নিজেকে দায়বদ্ধ বলে মনে করেন না, তিনি আর যাইহোক কোনভাবেই একজন ভালো মানুষ হতে পারেন না।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *