প্রত্যেক জীবের মাঝে যে ক্রিয়াশীল অবস্থা বিরাজ করে ওটাই আত্মা নামে পরিচিত। কোন দেহের ভিতরে আত্মা আছে কি না, তা জানার জন্য উক্ত দেহেরে মধ্যে পালস ক্রিয়াশীল আছে কি না তা জানার চেষ্টা করা হয়। যদি দেহের মধ্যে পালস খুঁজে পাওয়া না যায় তখন বলা হয় ওটা মৃত অর্থাৎ ওটাতে আত্মার উপস্থিতি নেই। বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী, “বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে আর গতিশীল বস্তু চিরকাল সমবেগে সরল পথে চলতে থাকবে” এটা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত সত্য। আর পবিত্র কুরআনেও এ কথাটাই বলা হয়েছে। পবিত্র কুরানের বিভিন্ন স্থানে মানব শিশুর জন্মের ধারাবাহিকতা বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে, “আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দু রূপে এক সংরক্ষিত আধারে স্থাপন করেছি। এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তরূপে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি, এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে অস্থি সৃষ্টি করেছি, অতঃপর অস্থিকে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি।(সুরা আল মুমিনুন/১২-১৪)। সুরা সাজদাহ এর ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “অতঃপর তিনি তাকে সুষম করেন, তাতে রূহ সঞ্চার করেন এবং তোমাদেরকে দেন কর্ণ, চক্ষু ও অন্তঃকরণ”।
বিজ্ঞানের থিওরী অনুযায়ী মানুষ সৃষ্টির পিছনে যদি কোন কারিগর না থাকে তাহলে শুক্রবিন্দু সর্বদাই শুক্রবিন্দু থাকার কথা; এটা রক্ত-মাংস-অস্থি সমৃদ্ধ কোন স্ট্রাকচার হওয়ার কথা নয়। উপরন্ত বিজ্ঞান এটাও গবেষণা করে জেনেছে যে, মানব শিশুর জন্মের ক্ষেত্রে মাতৃগর্ভে জীবণের উপস্থিতি উপলুব্ধ হয় ১২০ দিন পর। বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে এটা হওয়ার কথা নয়। বিশ্বনবী হযরত মুহম্মদ(সা.) এর বাণীতেও বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষের সৃষ্টির উপাদান আপন মাতৃগর্ভে শুক্রবিন্দু আকারে ৪০ দিন, জমাট বাঁধা রক্তে পরিণত হয়ে ৪০ দিন, গোশত আকারে ৪০ দিন থাকে। এরপর আল্লাহ একজন ফেরেশতার মাধ্যমে মাতৃগর্ভে বেড়ে ওঠা সন্তানের আমল, রিজিক, আয়ুষ্কাল ও ভালো-মন্দ লিপিবদ্ধ করেন। অতঃপর তার মধ্যে রুহ ফুঁকে দেয়া হয়।
বস্তুতঃ আত্মা হচ্ছে একটি শক্তি যা মহাশক্তির অংশবিশেষ তথা মহান আল্লাহর প্রতিনিধি(বাকারা/৩০)। আর মহাবিশ্বে শক্তি অবিনশ্বর, যার ক্ষয় নেই, কেবল রূপান্তর ঘটেমাত্র। সেই মহাশক্তিকে আল্লাহ/ঈশ্বর/প্রকৃতি যে নামেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন, এটা সুস্পষ্ট যে, এই মহাশক্তিই বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে শুক্রবিন্দুকে রক্ত-মাংস-অস্থি সমৃদ্ধ স্ট্রাকচার বা আধার বানিয়ে তাতে ফুঁক দিয়ে(বাতাস ঢুকিয়ে দিয়ে) এটাকে গতিশীল করে দেন একটা নির্ধারিত সময়ের জন্য(আল হিজর/২৯)। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর তিনিই আবার বল প্রয়োগ করে এটার গতি থামিয়ে দেন, এরই নাম জীবন ও মৃত্যু।